বণিকদের দখলে থাকায় ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে, পেছনে ধেয়ে আসতে থাকা যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হওয়ার আশঙ্কাকে সঙ্গী করে কাঁটাবন থেকে নীলক্ষেতের রাস্তাটি ধরে হাঁটতে হাঁটতে বন্দী পাখিদের দিকে চোখ যায়, চোখ পড়ে বন্দী মাছের দিকে; বন্দী প্রাণীকুলের দিকে। কাঁটাবনের বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটে বাণিজ্যিক উদ্দেশে বন্দী করে রাখা হয় পাখিদের, পশুদের, নানা প্রাণীর। এখানকার টিয়া পাখিরা ওড়ে না, পায়রারা ওড়ে না। উড়তে পারার কথাও না। ওড়ে না নাম না-জানা অন্য পাখিরা; পিঞ্জরে বন্দী হয়ে এরা বড়লোক আর বড়লোক হতে উদ্গ্রীব মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমের শোভার বর্ধন ও মনোরঞ্জনের আতঙ্কিত প্রহর গোনে।
একদিন সকালে চোখে পড়ে এক সবুজ টিয়া। পাখিটি নড়েচড়ে না; ডানাও ঝাপটায় না। সে বুক চিৎ হয়ে পড়ে ছিল ফুটপাত পেরিয়ে রাস্তার ওপরে। রাতে মৃত পাখিটিকে খাঁচার দোর খুলে ভোরের আলোয় ছুড়ে দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর পথে। বন্দী টিয়া এবার ‘মুক্ত’। টিয়া পাখি তো মরে খালাস। কিন্তু কর্মচারীদের কী হবে? বিক্রি হয়ে যাওয়ার আগে টিয়ার মরে যাওয়া না ঠেকাতে পারার দায়ে কি সাজা পেতে হবে না? কাঁটাবনের পশুপাখির দোকান নামক বন্দিশালাগুলোর দরজার গায়ে দেখা যায় অজস্র ফুটো। দিন কয়েক চেষ্টার পর বোঝা যায় যে এই হচ্ছে রাতের বেলায় শাটারবন্দী জীবের জন্য অম্লজান সরবরাহের এক নারকীয় ব্যবস্থা। মোট কথা, বন্দিশালার টিয়া, ময়না, পায়রা, ছোট্ট কচ্ছপ ছানাটি, খরগোশ-কুকুরসহ ওদের সবাইকে বেঁচে থাকতে হবে বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত।
বন্দিশালাগুলোর মধ্যেই ‘চিরবিদায়’, ‘শেষবিদায়’-এর দোকান। মৃত মানুষেরাও স্ট্যাটাসের কাফনে-কফিনে বন্দী। কেরোসিন কাঠের বাক্সের কফিনও কফিন আর মেহগনির কফিনও কফিন। আলাদা করে আবেগ করে ‘আমার এই দেশ সব মানুষের’ বলা যায়, আসলে ব্যাপারটা তা নয়; স্রেফ জাতীয়তাবাদী অতিশয়োক্তি। বন্দিশালাগুলো পেরিয়ে এগোতে থাকলে চোখে পড়বে সুশীল সমাজের অন্যতম প্রিয় এক বিষয়—শিশুশ্রম। মনুষ্যজন্মের দায় মেটাতে এরা সস্তার রেস্তোরাঁ, লেদ মেশিন ও বাইন্ডিংয়ের দোকানে প্রাণপাত করে। সকালের প্রথম আলোতেও মুখগুলোর দিকে তাকানো যায় না। বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ভীতিকর রকমের ‘দায়িত্বশীল’ চেহারাগুলোর দিকে তাকানো সহজসাধ্য নয়। বেঁচে থাকলে কৈশোর পাড়ি দেওয়ার আগে এদের পরিণতি কী হবে কে জানে?
হ্যাভ-নটদের জন্য মধ্যবিত্তীয় দুঃখবিলাস মাথায় নিয়ে কাঁটাবন মার্কেট ছাড়িয়ে কিছুটা হেঁটে পৌঁছানো যাক নীলক্ষেত মোড়ে। দেশের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের অন্যতম পথ। শুরুতে রাস্তার বাঁ পাশে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সাইনবোর্ডটি চমকে দিতে পারে। বিকার-আক্রান্ত বণিকতন্ত্রের এই সময়ে ফাঁড়ির সামান্য সাইনবোর্ডটিও কোনো এক ‘হেব্বি এনার্জি’র দখলে গেছে। এমনভাবে শব্দগুলো বসানো হয়েছে যে ভালোমতো খেয়াল না করলে সাইনবোর্ডটিকে পড়তে হতে পারে ‘হেব্বি এনার্জি নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি হেব্বি এনার্জি’ হিসেবে। কিচ্ছু বলার নেই। বেশি কথা বললে ‘প্রাইভেট-পাবলিক পার্টিনারশিপের’ প্রয়োজনীয়তার নামে বস্তাপচা কতগুলো যুক্তি দেখিয়ে দেবেন বাজারপ্রিয় পণ্ডিতেরা। সকাল বেলার দিকে হলে ‘হেব্বি এনার্জি নীলক্ষেত ফাঁড়ি হেব্বি এনার্জি’র ধাক্কা কাটিয়ে কয়েক কদম হাঁটতে পারলে বাঁচা যাবে।
‘হেব্বি এনার্জি নীলক্ষেত ফাঁড়ি হেব্বি এনার্জি’র কয়েক পা সামনে এই শীতে স্যার এ এফ রহমান হলের ভেতর থেকে মাথা বাড়িয়ে সুস্বাগতম জানাবে পুষ্পশোভিত শেফালি বৃক্ষটি। বেপরোয়া ফুল ঝরিয়ে শীতকালজুড়ে পথিকের পায়ে হাঁটা থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সে। সুগন্ধি-রূপবতী সাদা-কমলার শেফালিদের কে পারে প্রত্যাখ্যান করতে? শেফালিদের পৃথিবীতে অবতরণ চেয়ে দেখার মতো। তারা নেমে আসে একের পর এক, কখনো আবার একসঙ্গে কয়েকজন মিলে, ইচ্ছে হলে অনেকে একসঙ্গে। শেফালিরা বৃক্ষমাতার কোল ছেড়ে নেমে আসে ধীরে ধীরে, অবসর নিয়ে, হেলতে-দুলতে, ভাসতে-ভাসতে। ধুলার ধরণিতে নেমে এসে বেশি সময় স্বরূপে থাকতে পারে না ওরা; তবে যেটুকু সময় থাকে সেটুকু ভরিয়ে রাখে বর্ণে-গন্ধে, রঙে ও রসে।
শেফালিকে দেখা না ফুরোতেই চোখ যায় টিএসসি পর্যন্ত চলে যাওয়া রোড ডিভাইডারটির দিকে। সবুজ দূর্বা, লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা লতা ও ঝোপ আর নানা বর্ণের ফুলে শোভিত এই ডিভাইডারটি দেশের মধ্যে সুন্দরতম—প্রতিদিন দেখা হয় তবু প্রতিদিন দেখতে ইচ্ছে করে। বর্ষায় এখানকার দূর্বাদের সবুজ হয় ঘনতর, ল্যাম্পপোস্ট জড়ানো কিংবা মৃত্তিকালগ্ন লতাগুলোর ঘোর-সবুজ তখন খানিক কৃষ্ণবর্ণ দেখায়। আর সোনালি আভার লতা, নানা রঙের ঝোপগুলো হয়ে ওঠে অতি-উজ্জ্বল; স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। নিয়মিত জলসিঞ্চন আর যত্ন-আত্তির সুবাদের প্রথম শীতের এই দিনগুলোতেও এদের মোটেও দীনহীন দেখাচ্ছে না। এদের দেখার জন্য সূর্যের আলো থাকতে থাকতে নীলক্ষেত থেকে টিএসসি-অবধি রিকশাযোগে দু-তিন চক্কর দেওয়াই যায়।
মুহসীন হলের মাঠ, রাস্তার উল্টোদিকের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তোরণ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব পেরিয়ে তিন রাস্তার মিলনস্থলে পূর্ণ বিশালতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন রেইনট্রি; এর দিকে সমীহভরে তাকিয়ে থাকতে হয়। কাঁটাবন মার্কেটে যত পাখি বন্দী হয়ে আছে মনে হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পাখির বরাভয় এই একটি বৃক্ষ। রেইনট্রির উল্টোদিকে মল চত্বর, একটু সামনে কলাভবন। কলাভবনের পেছনে লেকচার থিয়েটার ও বাণিজ্য অনুষদ; পাস ঘেঁষে মধুর ক্যানটিন, ডাকসু ভবন, তারপর লাইব্রেরি। নিত্য বিচরণের এই জায়গাগুলোয় সকালে-দুপুরে-বিকেলে ও সন্ধ্যায় পাখ-পাখালির কলকাকলী, ঝগড়াঝাঁটি একটুখানি কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যায়। সন্ধ্যা একটু ঘন হলে ক্যাম্পাসে ঝিঁঝি পোকাদের ডাক শোনা যায়। পাখিদের কলতান, ঝিঁঝিদের ডাক শুনতে শুনতে কাঁটাবনের বন্দিশালার টিয়াকে মনে পড়ে, খরগোশ ছানাটিকে মনে পড়ে, চোখে ভাসে অ্যাকুরিয়ামের নির্মম সীমাবদ্ধতায় বিচরণকারী মাছগুলো; মুনাফাবাজির চরম উৎকর্ষের এই যুগে ওরা সবাই সাধারণ মানুষের মতোই বন্দী বেনিয়াতন্ত্রের কারাগারে।
শান্তনু মজুমদার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
একদিন সকালে চোখে পড়ে এক সবুজ টিয়া। পাখিটি নড়েচড়ে না; ডানাও ঝাপটায় না। সে বুক চিৎ হয়ে পড়ে ছিল ফুটপাত পেরিয়ে রাস্তার ওপরে। রাতে মৃত পাখিটিকে খাঁচার দোর খুলে ভোরের আলোয় ছুড়ে দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর পথে। বন্দী টিয়া এবার ‘মুক্ত’। টিয়া পাখি তো মরে খালাস। কিন্তু কর্মচারীদের কী হবে? বিক্রি হয়ে যাওয়ার আগে টিয়ার মরে যাওয়া না ঠেকাতে পারার দায়ে কি সাজা পেতে হবে না? কাঁটাবনের পশুপাখির দোকান নামক বন্দিশালাগুলোর দরজার গায়ে দেখা যায় অজস্র ফুটো। দিন কয়েক চেষ্টার পর বোঝা যায় যে এই হচ্ছে রাতের বেলায় শাটারবন্দী জীবের জন্য অম্লজান সরবরাহের এক নারকীয় ব্যবস্থা। মোট কথা, বন্দিশালার টিয়া, ময়না, পায়রা, ছোট্ট কচ্ছপ ছানাটি, খরগোশ-কুকুরসহ ওদের সবাইকে বেঁচে থাকতে হবে বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত।
বন্দিশালাগুলোর মধ্যেই ‘চিরবিদায়’, ‘শেষবিদায়’-এর দোকান। মৃত মানুষেরাও স্ট্যাটাসের কাফনে-কফিনে বন্দী। কেরোসিন কাঠের বাক্সের কফিনও কফিন আর মেহগনির কফিনও কফিন। আলাদা করে আবেগ করে ‘আমার এই দেশ সব মানুষের’ বলা যায়, আসলে ব্যাপারটা তা নয়; স্রেফ জাতীয়তাবাদী অতিশয়োক্তি। বন্দিশালাগুলো পেরিয়ে এগোতে থাকলে চোখে পড়বে সুশীল সমাজের অন্যতম প্রিয় এক বিষয়—শিশুশ্রম। মনুষ্যজন্মের দায় মেটাতে এরা সস্তার রেস্তোরাঁ, লেদ মেশিন ও বাইন্ডিংয়ের দোকানে প্রাণপাত করে। সকালের প্রথম আলোতেও মুখগুলোর দিকে তাকানো যায় না। বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ভীতিকর রকমের ‘দায়িত্বশীল’ চেহারাগুলোর দিকে তাকানো সহজসাধ্য নয়। বেঁচে থাকলে কৈশোর পাড়ি দেওয়ার আগে এদের পরিণতি কী হবে কে জানে?
হ্যাভ-নটদের জন্য মধ্যবিত্তীয় দুঃখবিলাস মাথায় নিয়ে কাঁটাবন মার্কেট ছাড়িয়ে কিছুটা হেঁটে পৌঁছানো যাক নীলক্ষেত মোড়ে। দেশের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের অন্যতম পথ। শুরুতে রাস্তার বাঁ পাশে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সাইনবোর্ডটি চমকে দিতে পারে। বিকার-আক্রান্ত বণিকতন্ত্রের এই সময়ে ফাঁড়ির সামান্য সাইনবোর্ডটিও কোনো এক ‘হেব্বি এনার্জি’র দখলে গেছে। এমনভাবে শব্দগুলো বসানো হয়েছে যে ভালোমতো খেয়াল না করলে সাইনবোর্ডটিকে পড়তে হতে পারে ‘হেব্বি এনার্জি নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি হেব্বি এনার্জি’ হিসেবে। কিচ্ছু বলার নেই। বেশি কথা বললে ‘প্রাইভেট-পাবলিক পার্টিনারশিপের’ প্রয়োজনীয়তার নামে বস্তাপচা কতগুলো যুক্তি দেখিয়ে দেবেন বাজারপ্রিয় পণ্ডিতেরা। সকাল বেলার দিকে হলে ‘হেব্বি এনার্জি নীলক্ষেত ফাঁড়ি হেব্বি এনার্জি’র ধাক্কা কাটিয়ে কয়েক কদম হাঁটতে পারলে বাঁচা যাবে।
‘হেব্বি এনার্জি নীলক্ষেত ফাঁড়ি হেব্বি এনার্জি’র কয়েক পা সামনে এই শীতে স্যার এ এফ রহমান হলের ভেতর থেকে মাথা বাড়িয়ে সুস্বাগতম জানাবে পুষ্পশোভিত শেফালি বৃক্ষটি। বেপরোয়া ফুল ঝরিয়ে শীতকালজুড়ে পথিকের পায়ে হাঁটা থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সে। সুগন্ধি-রূপবতী সাদা-কমলার শেফালিদের কে পারে প্রত্যাখ্যান করতে? শেফালিদের পৃথিবীতে অবতরণ চেয়ে দেখার মতো। তারা নেমে আসে একের পর এক, কখনো আবার একসঙ্গে কয়েকজন মিলে, ইচ্ছে হলে অনেকে একসঙ্গে। শেফালিরা বৃক্ষমাতার কোল ছেড়ে নেমে আসে ধীরে ধীরে, অবসর নিয়ে, হেলতে-দুলতে, ভাসতে-ভাসতে। ধুলার ধরণিতে নেমে এসে বেশি সময় স্বরূপে থাকতে পারে না ওরা; তবে যেটুকু সময় থাকে সেটুকু ভরিয়ে রাখে বর্ণে-গন্ধে, রঙে ও রসে।
শেফালিকে দেখা না ফুরোতেই চোখ যায় টিএসসি পর্যন্ত চলে যাওয়া রোড ডিভাইডারটির দিকে। সবুজ দূর্বা, লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা লতা ও ঝোপ আর নানা বর্ণের ফুলে শোভিত এই ডিভাইডারটি দেশের মধ্যে সুন্দরতম—প্রতিদিন দেখা হয় তবু প্রতিদিন দেখতে ইচ্ছে করে। বর্ষায় এখানকার দূর্বাদের সবুজ হয় ঘনতর, ল্যাম্পপোস্ট জড়ানো কিংবা মৃত্তিকালগ্ন লতাগুলোর ঘোর-সবুজ তখন খানিক কৃষ্ণবর্ণ দেখায়। আর সোনালি আভার লতা, নানা রঙের ঝোপগুলো হয়ে ওঠে অতি-উজ্জ্বল; স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। নিয়মিত জলসিঞ্চন আর যত্ন-আত্তির সুবাদের প্রথম শীতের এই দিনগুলোতেও এদের মোটেও দীনহীন দেখাচ্ছে না। এদের দেখার জন্য সূর্যের আলো থাকতে থাকতে নীলক্ষেত থেকে টিএসসি-অবধি রিকশাযোগে দু-তিন চক্কর দেওয়াই যায়।
মুহসীন হলের মাঠ, রাস্তার উল্টোদিকের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তোরণ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব পেরিয়ে তিন রাস্তার মিলনস্থলে পূর্ণ বিশালতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন রেইনট্রি; এর দিকে সমীহভরে তাকিয়ে থাকতে হয়। কাঁটাবন মার্কেটে যত পাখি বন্দী হয়ে আছে মনে হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পাখির বরাভয় এই একটি বৃক্ষ। রেইনট্রির উল্টোদিকে মল চত্বর, একটু সামনে কলাভবন। কলাভবনের পেছনে লেকচার থিয়েটার ও বাণিজ্য অনুষদ; পাস ঘেঁষে মধুর ক্যানটিন, ডাকসু ভবন, তারপর লাইব্রেরি। নিত্য বিচরণের এই জায়গাগুলোয় সকালে-দুপুরে-বিকেলে ও সন্ধ্যায় পাখ-পাখালির কলকাকলী, ঝগড়াঝাঁটি একটুখানি কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যায়। সন্ধ্যা একটু ঘন হলে ক্যাম্পাসে ঝিঁঝি পোকাদের ডাক শোনা যায়। পাখিদের কলতান, ঝিঁঝিদের ডাক শুনতে শুনতে কাঁটাবনের বন্দিশালার টিয়াকে মনে পড়ে, খরগোশ ছানাটিকে মনে পড়ে, চোখে ভাসে অ্যাকুরিয়ামের নির্মম সীমাবদ্ধতায় বিচরণকারী মাছগুলো; মুনাফাবাজির চরম উৎকর্ষের এই যুগে ওরা সবাই সাধারণ মানুষের মতোই বন্দী বেনিয়াতন্ত্রের কারাগারে।
শান্তনু মজুমদার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন